নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জিসি গোপগ্রাম জিসি সড়কের চেইনেজ ১ হাজার ১০০ মিটারের ২৫ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে রবিবার বিকালে নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রকৌশলী অফিস। এছাড়াও এই গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজের নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও দৃশ্যমান কাজ না হওয়ায় এলাকাবাসীর ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।
আরও পড়ুন: নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ব্রিজে ফাটল!
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ওই ব্রিজটি নির্মাণে দুই কোটি ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ১৯৯ টাকা পাঁচ পয়সায় গেল বছর ১২ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানার লক্ষ্মীপাশার মেসার্স নূর কনস্ট্রাকশন চুক্তি সম্পন্ন করে। ওই বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করার চুক্তি থাকলেও কাজের নমুনা মেলেনি কয়েক মাস পরেও। এরপর নির্ধারিত তারিখের পাঁচ মাস পরে ১৭ জুলাই ব্রিজের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। উদ্বোধনের পর কচ্ছপ গতিতে নির্মাণ সামগ্রী ফেলা হলেও নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেনি। অবশেষে মাসখানেক আগে ব্রিজের মাটির নিচে কয়েকটি পিলারের কাজ শুরু হতে না হতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এক বছর মেয়াদি কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ব্রিজের দেখা মেলেনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ব্রিজের পিলার নির্মাণে বালু মিশানো পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে, মোটা বালুর সাথে চিকন বালু ও দিনের পরিবর্তে রাতে চলছে ঢালাইয়ের কাজ।
এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্তে সত্যতা মেলায় রবিবার বিকালে উপজেলা প্রকৌশলী অফিস কাজ বন্ধ করে দেয়।
নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশেই উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পলাশ হোসেনের হাঁসের খামার। ব্রিজ নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু ঠিকাদার পাথরের সাথে বালু ও মোটা বালুর সাথে ধূলাবালু মিশিয়ে কাজ করছে। যা সম্পূর্ণ অনিয়ম ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া অনিয়মের কথা বললেই চাঁদাবাজির হুমকি দেয়।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় দুই বছরেও নির্মাণ হয়নি ২০ হাত দৈর্ঘ্যের ব্রিজ
হাসান নামের স্থানীয় একজন জানান, কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। এভাবে কাজ হলে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘এই ব্রিজটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এক বছরেও ব্রিজের মুখ দেখতে পারলাম না। মানুষের চলাচলের খুব কষ্ট হচ্ছে।’
ওই ব্রিজ দিয়ে চলাচলকারী কুমারখালী সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুরাদ হোসেন জানান, পাথরের বদলে শুধু বালু পাওয়া যাচ্ছে। আর উপরে মোটা বালু থাকলেও ভেতরে ধূলাবালু।
তার অভিযোগ, অনিয়ম করতেই দিনের বেলায় কাজ না করে রাতে কাজ চলতো।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাউকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: ২৭ লাখ টাকার ব্রিজের বেহাল অবস্থা
কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, বালু মিশানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ব্রিজের কাজ আপাতত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কাজের মেয়াদও শেষ হওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেছেন।